সাইফুল ইসলাম বাবুল :
বঙ্গীয় বদ্বীপের রয়েছে দীর্ঘ সমুদ্র উপকূল, সূন্দর বন থেকে নাফ নদীর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত যার। প্রাচিন কালের দিকে ফিরে দেখলে জলপথ যোগাযোগের কারনে এ সব উপকূলে গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। উপকূলের নির্মল বাতাস, মৌসূমী বৃষ্টি, মৃদু ভাবাপন্ন জলবায়ুর কারনে মানুষ শষ্য উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠে। কালের পরিক্রমায় এতদ্ধঞ্চলে আঘাত হানে নানা রকম ঘূর্ণিঝড় জলেচ্ছাস। উপকূলের মানুষ বার বার আশায় বুকবেধেছে। ভগ্ন হৃদয় নিয়ে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়নি। প্রকৃতির করাল থাবা মোকাবেলা করে নিত্য নতুন আশা নিয়ে পথ চলেছে। গড়ে তুলেছে উৎকৃষ নাবিক নৌযোদ্ধা। তবে নিজেকে সূখি করার নিরন্তর প্রচেষ্টাবাদের ভিতর জীবন সস্কার করেছে। মধ্যযুগ থেকে, হার্মদ, পর্তগীজ, মগ, জলদস্য দ্বরা বার বার এ উপকূল আক্রান্ত হয়েছে। তখন উপকূলের মানুষ নিজেরাই প্রতিরোধ করেছে কিংবা অত্যচার সহ্য করেছে।
সমুদ্রের দিকে ধাবমান স্থলে ধীরে ধীরে মানুষ নিজেকে আবিস্কার করে। মৎস আহরন, কৃষি, লবন উৎপাদন,শস্য ক্ষেতে সমৃদ্ধ অঞ্চলে দেখা যেত মোষের ঝলক,গরুর পাল, ছাগল, গৃহপালিত পাখি বিস্তৃত উপকূল যেন প্রকৃতি অবারিত সম্ভাব। তাইতো বলা হত পুকুর ভরা মাছ, গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু। পরিবেশ বিধ্বংসী নানা কারনে বৈশৈক উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকৃতি রুঢ় ভাব উপকূলকে ভাবিয়ে তুলেছে। ঝড়-ঝঞ্চা-জলোচ্ছাস আমারা যারা উপকূলে আছি তারা মহা ভাবনায়। আমাদের অরক্ষিত উপকূল যেন পিছিয়ে পড়া জনপদ। মাটিতে লোনার দোষ এসেছে, নদী প্রবাহ ক্ষীন, জোয়ার প্রবল। উপকুলের মাঝিরা সমুদ্রে ডাকাতের নির্মমতার শিকার। বিরান জনপদে পরিনত হচ্ছে। এখন উপকূল খেকে মানুষ হয়েছে পাহাড়গামী, শহরগামী আর বসতির আশায় তারা দৌড়াচ্ছে। ভাঙ্গা গড়ার খেলায় উন্নয়ন ভেস্তে যাচ্ছে। আগে ওয়াপদার কড়া নজরে ছিল বেডী বাধ, এখন অযতেœ ভঙ্কুর।
সরকার ভাবছেনা যে, উপকূল বিপন্ন এলাকা, এখানে অগ্রািিধকারের প্রয়োজন আছে। সময় এসেছে উপকূল নিয়ে ভাবার । সামনে উপকূলে গড়ে উঠবে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, নৌ দপ্তর। বিশে^র বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজ গুলো ভিড়বে বন্দরে। তাহলে কেন কষ্ট পাবে উপকূল ? বাংলাদেশের ১৯ টি জেলা উপকূলীয় অঞ্চলে। নাই শিক্ষার প্রসার নাই জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন, অবকাটামো গত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছেনা। বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে চাইলে উপকূলকে চাঙ্গা করতে হবে, তাই উপকূল বাসীর শ্লোগান হওয়া উচিত উপকূল বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। ৩টি পার্বত্য জেলা নিয়ে যদি হয় “পার্বত্য মন্ত্রনালয়” হাওয়র নিয়ে সরকার যদি চিন্তা করে আলাদা হাওর মন্ত্রনালয় করতে, তবে বাংলার ধমণী খ্যাত উপকূল কেন হবেনা “বাংলাদেশ উপকূল মন্ত্রনালয়”?
লবন দেয় উপকূল, মৎসের সিংহ ভাগ দেয় উপকূল, আমদানী রপ্তানীতে উপকূল, শস্যের যোগান দাতা উপকূল মেধা তৈরীর বীজতলা উপকূল, পর্যটনের আপার সম্ভাবনা উপকূল, খনিজ সম্পদের সম্ভাবনা উপকূল, তবে কেন পতিত জমির ন্যায় এ অঞ্চল ? এরকম দু’একটি দিক উন্নয়ন করে অনেক দেশ চলে। বাংলাদেশ চাইলে উপকূলীয় অঞ্চলকে উন্নয়ন করে খুব দ্রুত উন্নতি দেশে পরিনত করতে পারে। তাই বলব সাগর পাড়ের যত্নই যেন দেশের যত্নের অংশ হয়ে। আসুন উপকূলের সবাই যেথায় থাকি সেথায় ভাবি….।
পাঠকের মতামত: